Followers

Thursday 21 December 2017

ফেসবুকে কবিতা চর্চা করুন, তবে যাচাই করুন পত্রিকায়




ফেসবুকে কবিতা চর্চা করুন, 
তবে যাচাই করুন পত্রিকায়



হামিম হোসেন মণ্ডল: কবিতাচর্চা ভালো কাজ নয় কি?
দৈনিক কলম, ১৭/১২/২০১৭
অনেকে মনে করেন – কবিতাচর্চা নাকি অযথা সময় অপচয় করার শামিল; যদি পর্যাপ্ত বা চলনসই অর্থোপার্জনের মাধ্যম না হয়ে ওঠে। যদিও যথার্থ কবিতাচর্চা মূলত কবিতা রচনা ব্যক্তিত্ব, সম্মান (সম্মাননা) প্রাপ্তি ঘটায়। যথার্থ কবিতা মানুষের মনকে নাড়া দেয় ও প্রশান্তি আনে, কবি ও পাঠকের; তা ধৈর্য ও জীবনে বাঁচার অনুপ্রেরণা ও শক্তি জোগায়। ভগ্ন-হৃদয় এ মলম লাগায়। মৌলিক কর্মকাণ্ডে প্রেরণা জুগিয়ে চলে এই কবিতা। সুতরাং, কবিতার গুরুত্ব অপরিহার্য। তবুও, কবিদের অনেকাংশে (অনেক ক্ষেত্রে) আর্থিক অসচ্ছতা (সংকট) –এর মধ্যে সাংসারিক জীবন যাপন করতে হয়, হচ্ছে। অমোঘ সত্যটি হল – কবিতা তথা সাহিত্য হল মানুষের মনের খোরাক (খোরপোষ)। তাই, কবিতাচর্চা তথা সাহিত্যচর্চা ভালো ও গুরুত্বপূর্ণ কাজের মধ্যের স্থান নেয়। উল্লেখ্য, প্রচিলিত আছে –কবি, লেখকরা জাতির বিবেক। যদিও বর্তমান টাকার দুনিয়ায় প্রকাশ্য বা নিরবে যেন যথাযথ মূল্য দিতে চায়না লোভী মানুষ। অথচ, যথার্থ কবিতা যুগ যুগ ধরে কবিকে, সভ্যতাকে, ঐতিহ্যকে, স্মৃতিকে বাঁচিয়ে রেখে চলেছে। জানতে হবে, কবিতাচর্চা ও কবিতা রচনা এক জিনিস নয়। কবিতা রচনার জন্য কবিতাচর্চা অবশ্যই প্রয়োজন, কিন্তু কবিতাচর্চা করলেই তা কবিতা (রচনা) নাও হতে পারে। ফেসবুকে কবিতাচর্চা স্বাভাবিক বিষয়। ভালো কাজ সব সময় সব মাধ্যমেই ভালো। নয় কি? আসলে কবিতাচর্চার অর্থ তো কবিতা রচনার প্রাক প্রস্তুতি, প্রাকটিস, খসড়া, পরিকল্পনা, হাতেখড়ি ইত্যাদি বলা ভালো। এই ফেসবুক থেকে অনেকে কবিতাচর্চা ও রচনায় অনুপ্রাণিত হয়ে পত্র-পত্রিকায় স্থান করে নিয়েছেন। ফেসবুক তাঁদের কাছে বীজতলা, আর পত্রিকা – মূল আবাদি খেত। কলকাতায় এক অণুগল্প প্রতিযোগিতার মহাশ্বেতাদেবী স্মৃতি পুরষ্কার-২০১৭ গ্রহণ করতে গিয়ে এমনি অভিজ্ঞতা হয়েছে উপস্থিত কবি, সাহিত্যিক ও অংশগ্রহণকারীদের তথা ব্যক্তিদের মন্তব্য শুনে। ফেবুতে স্বঘোষিত কবি কিংবা ব্যক্তি বা ব্যবহারকারী কবিতা পোস্ট করেন বা কবিতা আকারে কিছু বক্তব্য বা লেখা বা মতামত শেয়ার করেন তা তিনি নিজ দায়িত্বেই পোস্ট করেন; এখানে কোনো রকম যাচাই-বাছাই, বাছ-বিচার তথা মনোনয়নের বিষয় বা সুযোগ থাকে না, কয়েকটি অ্যাপ্রুভাল গ্রুপ ব্যতীত। সতরাং, ফেবুতে এই রকম লেখা বা কোনো লেখা (বা কবিতাচর্চা) যে কবিতা (বা রচনার যথার্থ প্রচেষ্টা) তা বিচার্য বিষয় বলা যায়। এখন প্রশ্ন হল – কোনটা কবিতা বা কবিতা আদৌ হল কিনা, বা হল না – তা নির্ণয় করবে বা করবেন কে বা কারা? পাঠক, নাকি কোনো সদস্যমণ্ডলী? বলা যায় –(পাঠানো লেখা) প্রাথমিক ভাবে পত্রিকায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি (বিভাগীয় সম্পাদক) বা সদস্যমণ্ডলী লেখা মনোনয়ন ও নির্বাচন করেন, পরবর্তিতে তার জনপ্রিয়তা বা গ্রহণযোগ্যতা নির্ণয় করে বসেন সম্মানিত পাঠক। ফেবুর ক্ষেত্রে মনোনয়নের প্রয়োজন পড়ে না, গ্রহণযোগ্যতাও বোঝা যায় না সাধারণত লাইক-কমেন্টের বন্যা দেখে। কারণ, কবিতা খুব গভীর বোঝার অনুধাবনের বিষয়; বুঝতে সময় লাগে সাধারণত সাধারণ মানুষের, হাতে সময় কোথায় (!) যে ডেটা খরচ করে চার্জ ফুরিয়ে মনোরঞ্জন বাদ দিয়ে কবিতা পড়বে, গভীরে ঢুকবে? ফেবু একটি ভার্চ্যুয়াল জগৎ। এখানে লাইক বোতাম, কমেন্ট বাক্স ব্যক্তি বিশেষে ভিন্ন ভিন্ন কাজে বা ধারায় ব্যবহার করে থাকেন। অনেক বেশি বেশি লাইক-কমেন্টের আশায় বাঁকাপথ অনুসরণ করা হয় বলেও জানা যায়। অনেকে না বুঝেই লাইক-কমেন্ট করে থাকে(ন), সামনে যা আসে সে হিসেবে। আমি ব্যক্তিগত ভাবে আমার পছন্দমতো ভালো-মন্দ দুইই লাইক দিই, আমার লিস্টে থাকা বন্ধুদের দেখানোর প্রয়োজনিয়তা (বোধ করে) অনুসারে। যেমন- ধরুন বাবরী মসজিদ ধ্বংসের দৃশ্য বা ছবি (বা তেমন কোনো লেখা) এফবিতে লাইক দিলাম, তার অর্থ এই নয় যে আমি বাবরী মসজিদ ধ্বংস পছন্দ করছি, বরং বিষয়টি অন্যদের (বেশি বেশি) নজরে আনতে লাইক (বুড়ো আঙুল) দিলাম (যখন কমেন্ট আমার কাছে অসুবিধাজনক)। আবার ভালো লেখা বা ছবিতেও অনেক সময় লাইক দিইনা, পাছে বন্ধুদের নিউজ ফিডে বা নোটিফিকেশনে অযথা আমার লাইক-কমেন্টের ফিডে ভোরে যায় (বন্যা বয়ে চলে) এবং বিব্রত বোধ করে বসেন। (বেশি)পরিচিত-অপরিচিত হিসেবেও লাইক-কমেন্ট বহন করে। আসলে, Like-পছন্দ, আবার বুড়ো আঙুলটি বিপরীতও (অপছন্দ বা কাঁচকলা) বোঝায়।
সুতরাং, ফেসবুকে কবিতাচর্চা করুন– ভালো কথা। কিন্তু, নিজ কবিতা যাচাই করতে মানসম্মত বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় তা প্রকাশের প্রচেষ্টা চালান। তবেই কবিতা মানসম্মত হবে আশা করা যায়। মনে রাখবেন – ছাপা পত্রিকা ও বইয়ের কোনো (যথাযথ) বিকল্প নেই, হতে পারে না।। 


 (প্রকাশিত : দৈনিক কলম, ১৭/১২/২০১৭)

No comments:

Post a Comment