প্রসঙ্গ : কর্মসংস্থান জরুরি, না হলে নারীর ক্ষমতায়ন অর্থবহ হবে না |
কলম-এ ১৮ এপ্রিল ২০১৬ প্রকাশিত আজিজুল হক সাহেবের লেখা
‘কর্মসংস্থান জরুরি, না হলে নারীর ক্ষমতায়ন অর্থবহ হবে না’ অভিমতের পরিপ্রেক্ষিতে
এই পত্রের অবতারণা।
অভিমতে হক
সাহেব লেখেন, ‘আন্তর্জাতিক নারীদিবসে প্রতি বছর মেয়েদের সম্পর্কে বিভিন্ন
আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয় এবং সমস্যা সমাধানে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। কিন্তু
পুরুষশাসিত সমাজব্যবস্থায় তা বাস্তবায়িত হয় না।’ এখন, যে দেশের প্রধানমন্ত্রী
ছিলেন একজন নারী (ইন্দিরা গান্ধি), রাষ্টপতি ছিলেন একজন নারী (প্রতীভা প্যাটিল),
যে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী একজন মেয়ে (মমতা ব্যানার্জী); এমএলএ, এমপি, মন্ত্রীও
মহিলা হন; আইপিএস, অফিসার, সেনাবাহিনীতে মহিলা; যেখানে নারী-পুরুষ সকলেই ভোটাধিকার
প্রয়োগ করেন, ভোটে দাঁড়ান, রাস্তা জুড়ে মিছিলে হাঁটেন; চাকরিসহ সবক্ষেত্রে
নারী-পুরুষের সমানাধিকার প্রতিষ্ঠিত; বরং, কিছু কিছু স্থানে লেডিস ফাস্ট প্রথা
চালু আছে। সেখানে ‘পুরুষশাসিত সমাজব্যবস্থা’ কথাটি কতটা যুক্তিযুক্ত(?) তা ভাবার
বিষয়। ভাবুন, মেয়েরা ছেলেদের মতো কেন চলাফেরা ও মেলামেশা করতে পারে না? যেখানে
মাতা একজন মেয়ে বা নারী, সেখানে পিতা একজন ছেলে বা পুরুষ হলে দোষের কি? এটাই ত
প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট!
হক সাহেব
লেখেন, ‘সৃষ্টি রহস্য ও গতিশীলতা নির্ভর করে সামাজিক ও ধর্মীয় প্রক্রিয়া বৈবাহিক
বন্ধনের ওপর। তবে আর্থিক প্রগতি ছাড়া মেয়েদের জীবন অসম্পূর্ণ।’ প্রসঙ্গত, আর্থিক
প্রগতি ছাড়া প্রতিটি মানুষেরই (স্ত্রী, পুরুষ) জীবন অসম্পূর্ণ। কিন্তু একটু ভেবে
দেখুন, বিবাহ উপযুক্ত মেয়েকে (পাত্রিকে) পাত্রস্থ করার জন্য পাত্রি ও পাত্রির
অভিভাবকগণ ছেলের (পাত্রের) আর্থিক প্রগতির দিকটা সর্বপ্রথম আবশ্যিকভাবে দেখেন;
অপরপক্ষে, পাত্র ও পাত্রের পরিবার পাত্রির (মেয়েটির) আর্থিক প্রগতির বিষয়টি দেখার
প্রয়োজনবোধ করেন না। বলাবাহুল্য, ছেলেটির আর্থিক প্রগতি থকতেই হবে; কিন্তু,
মেয়েদের ক্ষেত্রে এটা সম্পূর্ণ ঐচ্ছিক। কারণ, ইসলামের দৃষ্টিতে, পরিবারের
ভরণ-পোষণের (আর্থিকভাবে) গুরুদায়িত্ব ছেলেদের (পিতা, স্বামী, ইত্যাদি) হাতে দেওয়া
রয়েছে, মেয়েদের (স্ত্রী, কন্যা, ইত্যাদি) হাতে নয়।
তিনি বলেন,
‘পাশ্চাত্যে মেয়েদের জীবনশৈলি প্রাচ্যের তুলনায় আলাদা।’ – এটাই প্রাচ্যের ঐতিহ্য।
তিনি আরও
বলেন, ‘আমাদের দেশের মেয়েরা শিক্ষা ও কর্মসংস্থানে পিছিয়ে আছে।’ বরং,
তুলনামূলকভাবে (পরিসংখ্যানের নিরিখে) ছেলেরা যথাযথ শিক্ষা (সামগ্রিকভাবে) ও
কর্মসংস্থানে (চাকরিগত) পিছিয়ে আছে। গ্রামে একটু বড় হতেই (কিশোর/যুবক) ছেলেরা
ভিনরাজ্যে পাড়ি জমায় রোজগারের সন্ধানে, তখন মেয়েরা স্কুল-কলেজে পড়াশোনা সারে এবং
বড়ভাই বা পিতা ভিনরাজ্য বা বিদেশ থেকে অর্থ পাঠান। বলাবাহুল্য, মেয়েদের তুলনায়
ছেলেদের সংখ্যা বেশি সমাজে।
হক সাহেব
সমব্যথির সুরে লেখেন, ‘বিবাহিত জীবনে মেয়েদের গর্ভধারণ, সন্তান প্রতিপালন এবং
সংসারের যাবতীয় কাজ করতে হয়।’ তবে, এর জন্য কি স্বামী পারিশ্রমিক দেবেন? নাকি
সরকার ‘গৃহিনীশ্রী’ প্রকল্প করবে? তারচেয়ে বরং, সম্পর্ক ও অবস্থান অনুযায়ী হৃদয়
অনুভূতি দিয়ে ভালোবাসা দিলে এবং যথাযথ যত্ন নিলেই মেয়েদের কাছে উপযুক্ত ও যথাযথ
পারিশ্রমিক দেওয়া হবে বলে মনেকরি। ‘কৃষিজীবি পরিবারের মেয়েরা রান্নাবান্ন ছাড়াও
গরুর খড়কাটা থেকে শুরু করে গবাদি পশুর খাওয়ার জল এবং পরিবারের স্নানের জল পর্যন্ত
সংগ্রহ করে। গ্রামীণ জীবন সম্পর্কে অনেকে অবহিত নন বলে মেয়েদের জীবনযন্ত্রণা তাঁরা
জানেন না বা জেনেও এড়িয়ে যান।’ এছাড়াও অনেক গ্রামীণ পরিবারে মেয়েরা পরিবারের
পানের জল সংগ্রহ, গম-ধান মিল থেকে পিষে-ভেনে আনা, ইত্যাদি কাজও করে থাকেন। মিল
থেকে গম পিষে আনার কাজ অতিরিক্ত হলেও বরং তা মেয়েরা ভালোবাসার তাগিদে ও পরিবারের
স্বার্থেই করে থাকেন; অনেক সময় বাধ্য হয়ে...। অবহেলিত বা নির্যাতিত বলে তাদের ভালোবাসাকে ছোট না করে (বা তাদেকে অতিরিক্ত কাজে
বাধ্য না করে) তাদের কিছু কিছু কাজ ছেলেরা ভাগ করে নিলে বা কাজে হাত লাগিয়ে
সহযোগিতা করলে সমস্যার সমাধান হয়। প্রসঙ্গত, এই পরিবারের পুরুষদের বা ছেলেদের
যথাযথ কর্মসংস্থান বা আর্থিক প্রগতি হলে পরিবারটির (ছেলে, মেয়েদের) জীবনধারা পালটে
যাবে। সেক্ষেত্রে, কেবলমাত্র মেয়েদের আর্থিক প্রগতি হলে পরিবারটির জীবনধারা
দৃষ্টিকটু দেখাবে, নাকি? কতজন মেয়ে কষ্টকরে বাইরের কাজ করতে ইচ্ছুক? অন্যদিকে, হক
সাহেব, একই পরিবারে ছেলেদের কাজের দিকে দৃষ্টিপাত করাননি। ছেলেরা কি সারাদিন
বাড়িতে ঘুমান; নাকি টিভি, সিরিয়াল দেখে দিনের একাংশ বা অধিকাংশ বিনোদনে কাটান?
নাকি, শিক্ষক হয়ে স্কুলে ফাঁকি দেন?
তিনি আরও
লেখেন, ‘আমাদের দেশে দরিদ্র পরিবারের কিছু মেয়ে বিএ, এমএ পাশ করেও চাকরি না পেয়ে হতাশার
মধ্যে জীবনযাপন করছে।’ কিন্তু, কেন? তারা ত যখন তখন ডাক্তার, মাষ্টার, চাকরিজীবি
ছেলেকে বিয়ে করে রাতারাতি বড়লোক বা ধনী হয়ে যেতে পারেন। বিয়ের পরে ভারি স্বামীর
দাপটে চাকরিও জুটে যায়। অথচ, আমাদের রাজ্যে তথা দেশে দরিদ্র পরিবারের বেশ কিছু
ছেলে বিএ, এমএ, বিসিএ, এমবিএ, বিটেক পাশ করেও চাকরি ছাড়া হতাশ জীবনযাপন করছেন।
এদের কি উচ্চশিক্ষিতা, চাকরিজীবি মেয়ে স্ত্রীরূপে কিংবা ধনী শশুর জুটবে? মেয়েদের
চেয়ে ছেলেদের আর্থিক প্রগতি আগে দরকার, যা আবশ্যিও বটে।
হামিম হোসেন মণ্ডল, ঝাউবনা, নওদা, মুর্শিদাবাদ
No comments:
Post a Comment