Followers

Friday 29 December 2017

উপর্জন ও অর্জিত সম্পদ হোক বৈধ, উপায় হোক সৎ ও হালাল


উপার্জন ও অর্জিত সম্পদ হোক বৈধ,
উপায় হোক সৎ এবং হালাল

কাজে ফাঁকি মারা মানুষ জাতির একটি সহজাত প্রবিত্তি হয়ে দেখা দিয়েছে। ‘ফাঁকি মারলে নিজেই সেই ফাঁকে পড়ে’ – এমন বিজ্ঞাপন আমরা দূরদর্শনে দেখেছি। কাজে ফাঁকি বা গাফিলতি দিয়ে পারিশ্রমীক নেওয়া হারাম যা গুনাহ্ বা পাপের পর্যায়ভুক্ত। লোকমুখে প্রচলিত আছে, কাজে ফাঁকি দিয়ে, অন্যকে ঠকিয়ে বা অন্যায় বা অবৈধ ভাবে আয় বা উপার্জন করলে বা সম্পদ করলে তা দীর্ঘস্থায়ী হয় না বা বেশিদিন টেকে না। বর্তমানে আধুনিক যুগে এই প্রচলিত ধ্যান ধারণার পরিবর্তন ঘটতে দেখা যাচ্ছে। হিংসার বসবর্তি হয়েই হোক বা আবেগে অথবা অধৈর্য হয়ে কিংবা আফশসের সুরে অনেককেই বলতে শোনা যাচ্ছে – কৈ! অনেকেইতো হাব্বিতাব্বি (বিপথে, আপথে, হারাম উপায়ে) মেরে অনেক উপার্জন করছে, আর দিব্বি আছে(ন) টিকে সুহালে। আসলে বর্তমান প্যাশনেবল মানুষ অর্থসর্বস্ব ও মর্ডান হয়ে পড়েছেন যে সাধারণ পাপ-পুর্ণের যথাযথ ইসলামিক জ্ঞানটুকুও সুপ্ত হতে শুরু করে দিয়েছে।

আরে ভাই, মানুষ ঠকিয়ে অন্যায় (হারাম) পথে উপার্জন করলে বা সম্পদ করলে তা টেকসই বা দীর্ঘস্থায়ী হোক বা না হোক – তাকি ইসলাম সমর্থন করে নাকি মানুষ বা রাষ্ট্রের আইন সমর্থিত? না। বরং ইসলাম ব্যক্তির হালাল রুজির কথা বলে, হারাম থেকে দূরে থাকতে ও তা বর্জন করতেই আদেশ দেয়। এখানে, হালাল বলতে কেবল বস্তু বা দ্রব্যের উপাদান সমূহ হালাল হলেই চলবে না, আমরা যার বিনিময়ে (পারিশ্রমিক ও সম্পদ) সে সব বস্তু বা দ্রব্যাদি সংগ্রহ করছি তাও হালাল হওয়া বাঞ্ছনীয়; একজন মুসলমানের নিকট তথা ইসলামে তা আবশ্যিক। ন্যায্য জিনিস ন্যায্য মূল্যের বিনিময় আবশ্যিক। অর্থাৎ, ব্যবহারিক বস্তু বা দ্রব্য ও তার প্রস্তুতকারী উপাদান যেমন হালাল হতে হবে তেমনি পারিশ্রমিক, উপার্জন, সম্পদ, বিনিময় মূল্য হালাল হতেই হবে এবং কেনাবেচা ন্যায্য (মূল্যে) ও বৈধ হওয়া বাঞ্ছনীয় ও আবশ্যিক।



কেউ চুরি করে বা মানুষ ঠকিয়ে কিংবা অন্যায় ভাবে উপার্জন করলে বা সম্পদ করলে সেই অর্থ ও সম্পদ দিয়ে পরবর্তিতে যা উপার্জন করবে বা তা থেকে যা আসবে বা কিনবে সবই হারামের পর্যায়ভুক্ত হবে না কি? একটু ভেবে দেখুন। আর সেই সম্পদ দীর্ঘস্থায়ী হলে জানতে হবে – এটাই তার দূর্ভাগ্য এবং আল্লাহ্-র গজব, বেতরাজি। বরং, অন্যায় উপার্জন বা হারাম সম্পদ দীর্ঘস্থায়ী না হলে, নষ্ট হলে – এটা তার সৌভাগ্য, যে পাপের বোঝা বা জমি তাকে বেশিদিন বহন করতে হবে না। ভালো কজের জন্য যেমন সোয়াব (ভালো ফল) পাওয়া যায়, তেমনি মন্দ কাজের জন্যও রয়েছে বিপরীতটি। একটি আম গাছ লাগালে যেমন যথদিন গাছটি থাকবে আম (ফল) দেবে, তেমনি বিচুটি বিছোলে ততদিন চুলকোবে। - এটাই স্বাভাবিক, সত্য।

তাই বলি, অন্ধের মতো অর্থসর্বস্ব উপার্জন ও সম্পদের সংগ্রহের দিকে না ছুটে সৎ, ন্যায় তথা হালাল উপার্জনে মননিবেশ ঘটান, সে স্বল্পই হোকনা কেন। মনে রাখবেন, মুসলমান হিসেবে আমাদের মূল উদ্দেশ্য ইসলাম পালন করা, আর তার জন্য প্রাথমিক ভাবে প্রয়োজন হালাল রুজি (উপার্জন, সম্পদ, সামগ্রি)। আপনি যতই রোজগার করুন না কেন, যতই সম্পদ করুন – তা হালাল বা সৎ, ন্যায় উপায়ে অর্জিত ও হালাল না হলে আপনি প্রকৃতপক্ষে হতভাগা ও দরিদ্র তথা নিচ। - নয় কি?
‘দেশের ৪ কোটি মুসলিমের ইসলাম সম্পর্কে ধারণা নেই, আক্ষেপ মাদানির’ (কলম, ১ নভেম্বর) – বিষয়টি প্রাসঙ্গিক, বাস্তবোচিত ও অধিক তাৎপর্যপূর্ণ। ‘শুধু নামেই মুসলিম। ইসলাম সম্পর্কে ন্যূনতম ধারণাটুকুও নেই।’ ‘মুসলিমদের এই অজ্ঞতা নিয়ে আক্ষেপপ্রকাশ করলেন জামিয়ত উলেমায়ে হিন্দের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মাহমুদ মাদানি।’ মাদানি যথার্থই সঠিক ও উচিৎ কথাই বলেছেন।

Click Here for More ... (দৈনিক কলম, অভিমত, ১৪/১১/২০১৭, 'প্রসঙ্গ : ইসলাম সম্পর্কে ধারণা')

No comments:

Post a Comment