Followers

Sunday 8 May 2016

গীবত : একটি সামাজিক অপরাধ



কলম-এ দ্বীন দুনিয়া ক্রোড়পত্রের পাতায় ৪ ডিসেম্বর যুগোপযোগী এবং মূল্যবান বিষয় নিয়ে আলোকপাত করেছেন জনাব আবুল হাসান 'গীবত : একটি সামাজিক অপরাধ' নিবন্ধের মধ্য দিয়ে বাস্তবসম্মতভাবে। তাঁর এই তথ্যপূর্ণ দলিল সম্মলিত আলোকপাতের জন্য বিশেষভাবে তাঁর জন্য দোয়া রইল। লেখাটি প্রকাশের জন্য কলম, পাঠক ও গীবত থেকে বাঁচাতে সদিচ্ছুকদের জন্যও রইল দোয়া। সর্বপরি সুপথ অবলম্বনে সচেষ্ট সকলের জন্যই দোয়া রইল।
আমার মতে, কারো দোষত্রুটি, ভুলত্রুটি অন্যের কানে তোলা বা পৌঁছে দেওয়াই হল 'গীবত''গীবত' বা 'পরচর্চা'। তাঁর উপস্থিতিতেও (তাঁর বিনা অনুমতিতে) অন্যের কাছে তাঁর দোষত্রুটি বা ভুলত্রুটি তুলেধরাও কিন্তু অন্যায়, অপরাধ। পবিত্র কুরআনের সতর্ক বাণী, 'তোমরা অন্যের দোষ খুঁজে বেড়াবে না।' (সূরা হুজুরাত, আয়াত : ১২)
উল্লেখ্য, হযরত আবু হুরায়রা রা. বর্ণনা দিয়েছেন, হযরত মুহাম্মাদ সা. বলেছেন : 'তোমরা কি জানো গীবত কাকে বলে?' সাহাবীরা বললেন : 'আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল সা. ভালোই জানেন।' উত্তরে রাসূলুল্লাহ্ সা. বললেন : 'তোমার ভাই সম্পর্কে এমন কথা বলা, যা সে অপছন্দ করে - সেটাই গীবত।' - যথার্থ।
    কারো দোষত্রুটি বা ভুলত্রুটি দেখলে তা দ্বিতীয় ব্যক্তি বা অন্য কারো কানে না-তুলে, অপরাধ তথা পাপের পাল্লা ভারী না-করে, প্রয়োজনে তাঁকে যথাযোগ্য সম্মান প্রদর্শনের মাধ্যমে গোপনে তাঁর সমর্থন আদায়ের মধ্য দিয়ে সুসঙ্গতভাবে সংশোধন যোগ্য হলে তাঁর দোষত্রুটি বা ভুলত্রুটি সংশোধনে সাহায্য করা প্রয়োজন; কিন্তু কোনভাবেই পিড়াপিড়ি, সম্মানহানী, বিতশ্রদ্ধা বা মনমালিন্য করা অনুচিত।
লেখক উল্লেখ করেছেন গীবত থেকে বাঁচার যথার্থ তিনটি উপায়ের কথা। সবচেয়ে কার্যকারী ও গীবত এড়ানোর বাস্তব উপায় হল - বাক্ সংযম অবলম্বন করা। এই প্রসঙ্গে যথার্থ বলেছেন :
  'যত কথা কম বলা যায় তত বেশি গীবত থেকে বাঁচা যাবে। অপ্রয়োজনীয় ও অপ্রাসঙ্গিক কথাবার্তা সম্পূর্ণরূপে পরিহার করতে হবে। চুপ থাকা ইবাদাতও বটে। একবার আল্লাহর রাসূল সা. বলেছিলেন, 'হে আবু যর! আমি কি তোমাকে এমন একটা গুনের কথা বলব না, যা বহন করতে হালকা কিন্তু মীযানের পাল্লায় খুব ভারী?' হযরত আবু যর রা. বললেন, 'হ্যাঁ।' রাসূলুল্লাহ্ সা. বললেন, 'দীর্ঘ সময় ধরে নীরব থাকা ও উত্তম ব্যবহার।' (মিশকাত)।'
কিন্তু প্রয়োজন সাপেক্ষে কথা বলে উচিৎ, চুপ থাকা নয়। প্রয়োজনীয় কথা সাধারণত ও প্রধানত কম বা অল্প-ই হয়ে থাকে।
কম কথা, উচিৎ কথা, কথার সেরা কথা। কথায় আছে - বোবার শত্রু নাই। আসলে কাজের কথা অল্প হয়। আর 'পরচর্চা' বাদে (ছাড়া) কোনো কথাই দীর্ঘ হয়না। আর বর্তমানে 'পরচর্চা'র আরৎ হচ্ছে রাস্তা লাগোয়া চা-এর (চায়ের) দোকানগুলি।
পূর্ণ জ্ঞান হলে মানুষ চুপ হয়ে যায় :
লোকশিক্ষক পরমহংস শ্রীরামকৃষ্ণ দেব বিদ্যার সাগর ঈশ্বরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়কে বলেছিলেন, 'ব্রহ্ম অনুচ্ছিষ্ট''পূর্ণ জ্ঞান হলে মানুষ চুপ হয়ে যায়। বিচার করা যতক্ষণ না শেষ হয়, লোকে ফড় ফড় করে তর্ক করে, শেষ হলে চুপ হয়ে যায়। কলসি পূর্ণ হলে আর শব্দ হয় না। যতক্ষণ না কলসি পূর্ণ হয় ততক্ষণ শব্দ।'
আবার দেখবেন জ্ঞানী মানুষেরা কম কথাই বলেন। যেমন ধরুন আমরা যদি বলি - ঘোড়ার ডাক; জ্ঞানী বলবেন - হ্রেষা। হলনা কম কথা! একটা অংক কোনো বিজ্ঞ মনেমনে কষে নিমেশেই একটা শব্দে বা বাক্যে উত্তর বলে দিতে পারেন; কিন্তু আমাদের কাছে ওই অংকের সমাধান করতে বেশ কিছু সময় নিয়ে কষে একটা সাদাপাতা ফুরিয়ে যাবে! তাইতো বলে ফাঁকা কলসি বাজে বেশি। আর যে সৃষ্টি সম্পর্কে ভাবে, সৃষ্টিকর্তার নৈকট্য খোঁজে, সৎ ও সত্য সন্ধানী, সারাক্ষণ নিজের অস্তিত্ব খোঁজে, বোঝে অন্যের দুঃখ-কষ্ট, মানে নিয়তি, দূরদৃষ্টি সম্পন্ন, আত্মসমালোচক, আত্মসম্মাণবোধ আছে সে আরও চুপ হয়ে যায়। কারণ, দোষারোপ করার কোনো জায়গা নেই, নিষ্ঠুর দুনিয়াতে কর্মই ধর্ম, দ্বীন দুনিয়া-তে কেউ কারো নয়, সব একলা, কেবলমাত্র এক আল্লাহ্-ই ভরসা (যিনি সর্বদা সর্বত্র বিরাজমান, তাঁর সঙ্গে সঙ্গোপনে স্বচ্ছ অন্তরে ও চোখের পানিতে কথা বলা যায়।), নিরতি বা বিধাতার লিখন কেউ খণ্ডন করতে পারেনা, নিষ্ঠুর বাস্তব ও বাস্তবের নির্মমতাও অবোধ বালকের মতো মেনে নিতে হয়, সব সময় নিজের দোষত্রুটির দিকে দৃষ্টিপাত, নিজের ভুলত্রুটির জন্য আত্মশোচনা, নিজের ব্যর্থতা বা অসামর্থতার প্রতি গভীর অনুশোচনা কথা বলার প্রাসঙ্গিকতা নষ্ট করে দেয়। ইসলাম - জাকজমক, অপচয়, গালাগালি, হিংসা, হাসি-ঠাট্টা-তামাশা, ঠকানো, দোষারোপ করা, গীবদ-কে বিন্দুমাত্র পশ্রয় দেয়না।
  সুতরাং, এতো আনন্দ ও (দীর্ঘ)কথা কীসের?

No comments:

Post a Comment