সড়ক দূর্ঘটনা ও প্রাসঙ্গিক ভাবনা এবং বর্তমান অবস্থা
হামিম হোসেন মণ্ডল (বুলবুল)
সড়ক দূর্ঘটনা, বাস তথা যান
দূর্ঘটনা নতুন বিষয় নয়। শরীর থাকলে যেমন অসুস্থতা আসবেই কোনো না-কোনো সময়, যানবাহন
ব্যবহার করলে তেমন খারাপ হবে, দূর্ঘটনাও ঘটবে। - এমনটাই দেখে আসছি। নয় কি?
অথচ,
প্রতিনিয়ত কিছু সাবধানতা মেনে চললে বড় (জটিল, ঘনঘন) অসুস্থতা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া
সম্ভব তেমনি অনেক বড়বড় বা ঘনঘন দূর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব। লক্ষ্য করবেন – সাবধানতা
অবলম্বন করতে করতে কোনো সময় অসতর্কতা এসে গেলে ঘটে বিপত্তি। সুতরাং, মুহুর্তের
জন্যও সতর্কতা বিচ্যূতি ঘটা যাবে না, বিশেষ ক্ষেত্রে তো নয়ই।
নতুন
ইংরেজি বছর পড়তে না-পড়তেই একাধিক মর্মান্তিক সড়ক দূর্ঘটনা ঘটে চলেছে রাজ্যে।
ঘটে চলেছে বললাম, কারণ এই নিবন্ধটি খসড়া লেখার পরেও ‘সুতিতে
পথ দূর্ঘটনায় মৃত্যু হল এক বাইক আরোহীর’-এমন অনেক খবরই পেলাম বিভিন্ন
সংবাদমাধ্যম সূত্রে। তবে অধিকাংশই যেন মুর্শিদাবাদে ঘটা। এপর্যন্ত বছরের বড়
মর্মান্তিক দূর্ঘটনাটি ঘটে ২৯ জানুয়ারি জেলার দৌলতাবাদে বালিরঘাট এলাকায়। গোটাএকটি
সরকারি বাস যাত্রীসমেত ভৈরবের গভীর পানিতে ঝাপিয়ে পড়ে ৪৩-এর অধিক প্রাণ অকালে
তলিয়ে (খোয়া) গেল। এর কিছুদিন আগে জেলার বেলডাঙ্গার বেগুনবাড়ি এলাকায় নয়নজুলি
গর্তে পড়ে (বাস দূর্ঘটনা) শিশুসহ ১০/১২টা প্রাণ যায়। তবুও, যান তথা সড়ক দূর্ঘটনা
থামেনি! কখনো লরি-বাইক, লরি-টুকটুক, চিংড়িহাটা বাস দূর্ঘটনা, প্রভৃতি সংঘর্ষ
চলছেই। ‘সেভ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’
প্রকল্প (অনুষ্ঠান) এর পরেও খবর আসছে ‘ট্রাকের চাকায় পিষ্ট এসআই’। যদিও তুলনামূলক ভাবে মোটর-বাইক দৌরত্ব বেশ কমেছে।
প্রসঙ্গতঃ,
কলম (০২ ফেব্রুয়ারি) অভিমতে (দূর্ঘটনা রোধে সেই সচেতনতা কোথায়?) হক
সাহেব লেখেন, ‘মুর্শিদাবাদের দৌলতাবাদে বাস
দূর্ঘটনা থেকে শিক্ষা নিতে হবে পরিবহণ দফতর, বাসচালক ও মালিক, সাধারণ মানুষ ও
পুলিশ-প্রশাসনের দারিত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিবৃন্দের’। এখন বিযয় হল – যা (ঘটনা বা বিযয়) থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা যায় তা বেশি বেশি হোক,
দেখতে চাই ও অন্যদের দেখার পরামর্শ দিই। ধরুন – ইসলামি জালসা থেকে শিক্ষা গ্রহণ
করা যায়, তাই প্রতি তা হোক, শুনি ও অন্যরা শুনুক তাই চাই। পত্রদাতা দূর্ঘটনা থেকে
শিক্ষা নিতে পরামর্শ দিয়েছেন সবাইকে। তবেকি দূর্ঘটনা যত ঘটবে শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ
তত বাড়বে? ‘দূর্ঘটনা
থেকে শিক্ষা’ কেন নিতে হবে? মানুষ
কি এতোই পিছিয়ে পড়েছে হঠাৎ! বাসচালক, পুলিশ-প্রশাসন কি যথাযথ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নয়?
যথাযথ প্রশিক্ষণ নিয়ে উপযুক্তরা বাসচালক কিংবা পুলিশ-প্রশাসনের সদস্য হন। প্রবাদ
আছে – চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ে। - সেই বুদ্ধি কি কোনো কাজে লাগে?
লাগে না। আগুনে হাত দিলে জালা করে – এটা সবাই জানে, সদ্যজাত বা নিতান্ত শিশু বাদে।
এখন যদি আগুনে হাত দিয়ে শিখতে বা জানতে চান, তবে শিক্ষা এগুবে কিকরে!
দৌলতাবাদে বাস দূর্ঘটনায় প্রধানত চালকের মোবাইলকে দায়ি করা হয়েছে। কখনো কখনো শিতের কুয়াশার বিষয় উঠে এসেছে। দূর্ঘটনাটি গবেষণা করে – ‘মোবাইল কানে ড্রাইভ’ নিশিদ্ধ হয়েছে। মনে হতেপারে যেন মোবাইল-ই দায়ি। আসলে দায়িত্ব চালকের। এটা তো সাবধানতা! বেশ কিছু মানুষের মস্তিষ্ক আসলে এতটাই অপরিণত (বলে মনে হয়) – গাড়ি, মোবাইলকে খেলনা ভেবে বসে। আমেরিকায় বন্দুক যেন খেলনায় পরিণত হয়েছে, ‘আমেরিকায় ফের স্কুলে বন্দুকধারী ছাত্রের গুলী’ – এমনটাই বোঝায়।
প্রকৃতপক্ষে,
কখন, কোথায়, কোন্ জিনিস, কতটা ব্যবহার করতে হয়/হবে অথবা হয়না/হবেনা – বুঝতে হবে
পরিণত সুস্থ মস্তিষ্কে। আপনার উপর পাথর ছুড়ে পাথরের দায় দিলে তো চলবে না।
তবে
সাবধানতার পরেও দূর্ঘটনা ঘটলে সাধারণত এতো মারাত্মক আকার নেয় না অথবা এতো ঘনঘন
সংগঠিত হয় না। কোনো মর্মান্তিক দূর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে দেখবেন – কোনো গাফিলতি,
অসতর্কতা, অসাবধানতা-ই উঠে আসবে/আসে। ছোট ছোট দূর্ঘটনার দিকে দেখুন – জানবেন
সাবধানতা ও সতর্কতার জন্য মারাত্মক দূর্ঘটনার থেকে রেহায় মিলেছে।
মনে
রাখবেন – মানুষে তথা জীবজগতের বেঁচে থাকাটাই আশ্চর্যের। তাই বেঁচে থাকতে হলে
প্রতিনিয়ত সংগ্রাম চালাতে হয়, জীবনসংগ্রাম। দূর্ঘটনা থেকে বাঁচতেও প্রতিনিয়ত
সতর্কতা ও সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়। কথায় আছে – সাবধানতার মার নেই। অন্যথায় জীবন সংকটাপন্ন।
অনেক
সময় অনেক জায়গায় জীর্ণ কিংবা সংকীর্ণ রাস্তা ও কমজোর সেতু দূর্ঘটনার উল্লেখযোগ্য
কারণ হয়ে দাঁড়ায়। মুর্শিদাবাদ জেলায় দূর্ঘটনা সম্ভাবনা এমন প্রায় অনেকগুলি রাস্তা ছিল এবং
সেতুর সংখ্যা বর্তমান। বহরমপুরে বহুল ব্যবহৃত রামেন্দ্র সুন্দর সেতু ওরফে রাধার
ব্রীজটি ভালো নেই, হরিহরপাড়া ও পিঁপড়াখালি সেতুটি দূর্ঘটনার ভয় দেখায়। ইত্যাদি
ইত্যাদি আরও রয়েছে। কথায় রয়েছে – দূর্ঘটনার হাত-পা নেয়। দূর্ঘটনা ও ভয় কাটাতে
এগুলো নিরাপদ রাখা একান্ত প্রয়োজন।
আমার
যাত্রা পথে প্রাসঙ্গিক অনেক ঘটনার মধ্যে দু’একটি
বলছি শুনুন। কিছুমাস আগে একদিনের ঘটনা। বহরমপুরে যাবো, ত্রিমোহিনী মোড়ে বাসে উঠি।
আসন না মেলায় অগত্যা কেবিনে একটু ঠেসাঠেসি করে বসতে হল। বাস চলল, এসময় চালক ও পাশে
বসা এক যাত্রীর কথোপোকথনের মাঝে চালক বলল, এই বাসটি ভালো নয়, স্টেয়ারিং ঠিকঠাক
নিজের মতে ঘোরে না, সমস্যা হয়, আমি বলে চালাচ্ছি, অন্য কেউ চালাবে না, ইত্যাদি
ইত্যাদি। সেদিন চালকের কথাগুলি মনে ধরেছিল (বাহাদুর চালক হিসেবে), কিন্তু গাড়ি ও
চালককে মনে রাখা হয়নি (মস্তিষ্কের অবস্থান ছিল - এটা কোনো বিষয় নয়)। - এটা কি
চালকের বাহাদুরি? এক্ষেত্রে দূর্ঘটনা না-ঘটাটাই
অস্বাভাবিক নয় কি? হয়তো চলকদের দক্ষতার জন্য তা
স্বাভাবিক হয়ে যায়!
অন্য
একদিন, সম্প্রতি, বহরমপুর থেকে ফিরছি, গন্তব্যস্থাল ঝাউবনা মোড়। গাড়িটিতে সিটের
পেছনে ক্রমিক নম্বর নেই, আছে জানালার পাশে গায়ে, লব/হর আকারে। এক্ষেত্রে কোন্
নম্বরটা (লব/হর) জানালার পাশে – বচসার সুযোগ থাকে। এজন্যই কি সিটের পাছনে সিট
নম্বর রাখেনা কিছু বাস? এটা বাস্তব। দু’একটি
স্টপেজ নিতেই ভিরে ঠেসাঠেসি, দরজা বন্ধ রাখার উপায় থাকছেনা এমন। এর মধ্যে থেকে কেউ
(যাত্রী) তেজ দেখিয়ে বলে উঠল, বাসে চড়লে ঠেলাঠেলি, গুতাগুতি, ধাক্কাধাক্কি, কষ্ট
হবেই; তা নাহলে ব্যক্তিগত গাড়িতে যেতে হবে। প্রশ্ন হল –
বাস তথা যান সফরে গন্তব্যস্থানে পৌঁছোনটাই কি মূল লক্ষ্য?
নাকি আদবের সহিত সুস্থ শরীরে পৌঁছোনটা? – এমন গাড়িতো সাধারণত দূর্ঘটনা
সম্ভাবনা! নয় কি? – সুতরাং, গাড়িতে যাত্রীভিড়
নিয়ন্ত্রণ ও সুস্থ যাত্রার বিষয়টি গুরুত্ব পাওয়া উচিত। বাসটি সারগাছি মোড় সংলগ্ন
আসতেই বন্ধ হয়ে পড়ে। নাকি বাসে কিছু সমস্যা ঘটেছে। কিছু টাইট দিতে হবে, রেঞ্জ
খুঁজে মিলছে না, আবশেষে কোনো এক অবস্থানে মিলল। এমন সময় এক যাত্রী জানাল, সকালে সে
এই গাড়ে শহরে গিয়েছিল, তখনই কিছু খারাপ ছিল বলে সারাতে বলছিল চালক। তারপরেও
সারানো নাহলে দূর্ঘটনার কবলে পড়া কি স্বাভাবিক ঘটনা নয়? –
খারাপ বা অসুবিধাজনক গাড়ি বা যান না সারিয়ে রাস্তায় নামানো যান না হয় – বিষয়টিতে
গুরুত্ব দিতে হবে। মাথায় রাখতে হবে – গাড়ি কিংবা মোবাইল খেলনা নয় এবং মানুষও
পুতুল নয়।
আর,
গাড়ি চালানোর সময় চালক যেন কোনো মাধ্যমেই অন্যকারো সঙ্গে গল্প বা কথোপকথোনে না
মাতেন। শিতের কুয়াশাচ্ছন্ন রাস্ত প্রয়োজন মতো দেখা না গেলে সে যাত্রা বাতিল বা
বিলম্ব করা দরকার, রেলযাত্রার মতো। কারণ, জীবনের দাম অনেক বেশি।
No comments:
Post a Comment